বীর কন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার
চট্টগ্রামের ধলঘাট দক্ষিণ সমুরা গ্রামে ১৯১১ সালে ৫ মে জম্ম গ্রহণ করেন বিট্রিশ বিরোধী আন্দোলনের মহানায়ক মাষ্টারদা সূর্য সেনের সহযোদ্ধা ও প্রথম নারী শহীদ বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। তাঁর বাবার নাম জগবন্ধু ওয়াদ্দেদার ও মায়ের নাম প্রতিভাময়ী দেবী। তার বাবা ছিলেন চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল অফিসের হেড কেরানী। প্রীতিলতার বাড়ি দক্ষিন সমূরা গ্রামে হলেও তার বাবা থাকতেন বাবার মামার বাড়ি ধলঘাট গ্রামে। তাই তাঁর জম্ম ধলঘাট গ্রামে। পরে বাবার তার পাঁচ ছেলে মেয়েকে নিয়ে থাকতেন চট্টগ্রাম আসকার দীঘির পাড় এলাকায়।
প্রীতিলতা পড়ালেখা করেছেন ডাঃ খাস্তগীর ইংরেজি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা ইডেন কলেজ ও কলকাতা বেথুন কলেজে। পড়ালেখায় অত্যান্ত মেধাবী ছিলেন তিনি। তিনি পড়া লেখা অবস্থায় ডাঃ খাস্তগীর বালিকা বিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষিকা ঊষা চট্রোপাধ্যায়ের ইঙ্গিতে ইডেন কলেজের অধ্যাপিকা নীলিমা বোস তাকে বিপ্লবী দল দীপালী সংঘের সদস্য করার পরিকল্পনা নেন। তিনি তাকে সংঘনেত্রী লীলা নাগের সাথে পরিচয় করে দিলে নেত্রী তাকে সংঘের আর্দশ ও উদ্দেশ্য নিয়ে বোঝান এবং সদস্য হওয়ার জন্য একটি ফরম দেন। পরে তার জম্মস্থান ধলঘাটের আরেক বিপ্লবী পুর্ণেন্দু দস্তিদারের সহায়তায় ১৯২৮ সালে মাষ্টারদা সূর্যসেনের বিপ্লবী দলের সদস্য হন প্রীতিলতা। শর্ত ছিল প্রযোজন হলে দেশের মুক্তির সংগ্রামে নিজের সর্বস্ব এবং জীবন পর্যন্ত ত্যাগ করতে প্রস্তত ্।
তিনি চট্টগ্রাম নন্দনকানন অপর্ণা চরণ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকতা করতেন। সেই সময়ে মাষ্টারদার সাথে বৈঠকে গিয়েছিলেন ধলঘাট সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে। সেইখানে গোপন বৈঠক চলাকালে সাতিত্রী দেবীর মেয়ে দোকানে তাদের জন্য ডিম কিনতে গিয়ে এলাকার এক ব্রিটিশদের গুপ্তচরের সন্দেহ হয়। ফলে তিনি ক্যাম্প এলাকায় ব্রিটিশদেরে ঘাঁটিতে খবরটি ফাঁস করে দেয়। পরে রাত্রে ব্রিটিশ সৈন্যরা এসে তাদের উপর আক্রমণ শরু করলে তাদের সাথে বিপ্লবীদদের সাথে যুদ্ধ সংঘটিত হলে সেই খানে ব্রিটিশ ক্যাপ্টন ক্যামরুণ মারা যায়।
১৯৩২সালের ১৮ সেপ্টেম্বর কাট্রলী ঘাঁটি থেকে মাষ্টারদার আহবান এল প্রীতিলতার কাছে। ছুটে গিয়ে মাষ্টারদার মুখোমুখি দাঁড়ালেন । মাষ্টারদা তাকে বিপ্লবী বাণী শুনালেন। বললেন,২৪ সেপ্টেম্বর রাতে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করা হবে। তার নেতৃত্ব থাববে তুমি,চট্টগ্রামের রানী অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। এই নির্দেশ ঘোষণা করে মাষ্টারদা স্থানান্তর চলে গেলেন। সেই ক্লাবের বাইরে লেখা থাকত ”কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ”। প্রীতিলতার নেতৃত্বে সেইদিন ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করেন বিপ্লবীরা। এই অভিযানের শত্রুর গুলিতে আহত হন- প্রীতিলতা। পরে শত্রুর হাতে ধরা পড়ার আগেই তাঁর হাতে থাকা পটাসিয়াম সায়েনাইট জাতীয় বিষ পান করে তিনি আতœহুতি দেন।
বর্তমানে চট্টগ্রামের পটিয়ার ধলঘাট দক্ষিণ সমুরা গ্রামের প্রীতিলতার ভিটেবাড়ি তাদের বংশধরদের মধ্যে কেউ থাকে না। সেই বাড়িটি সরকারি ভাবে ইজরা নিয়ে বাস করেন শোভারানি দাশের পরিবার। তবে যে ভিটেবাড়িটিতে তিনি থাকতেন সেই অংশটি রয়েছে পরিত্যক্তভাবে। বসতভিটের পশ্চিমে ১৯৭০ সালে বিপ্লবী পূর্ণেন্দু দস্তিদার প্রীতিলতা- অধেন্দু দস্তিদার স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ প্রতিষ্টা করেন।
বিপ্লবীরা এভাবে ব্রিটিশ ও পাকিস্থানী শোষকদের তাড়িয়েছেন দেশ থেকে। বুকের তাজা রক্তে ছিনিয়ে এনেছেন লাল সবুজ পতাকা। আমরা তাদের শ্রদ্ধা জানাই।
প্রীতিলতা পড়ালেখা করেছেন ডাঃ খাস্তগীর ইংরেজি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা ইডেন কলেজ ও কলকাতা বেথুন কলেজে। পড়ালেখায় অত্যান্ত মেধাবী ছিলেন তিনি। তিনি পড়া লেখা অবস্থায় ডাঃ খাস্তগীর বালিকা বিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষিকা ঊষা চট্রোপাধ্যায়ের ইঙ্গিতে ইডেন কলেজের অধ্যাপিকা নীলিমা বোস তাকে বিপ্লবী দল দীপালী সংঘের সদস্য করার পরিকল্পনা নেন। তিনি তাকে সংঘনেত্রী লীলা নাগের সাথে পরিচয় করে দিলে নেত্রী তাকে সংঘের আর্দশ ও উদ্দেশ্য নিয়ে বোঝান এবং সদস্য হওয়ার জন্য একটি ফরম দেন। পরে তার জম্মস্থান ধলঘাটের আরেক বিপ্লবী পুর্ণেন্দু দস্তিদারের সহায়তায় ১৯২৮ সালে মাষ্টারদা সূর্যসেনের বিপ্লবী দলের সদস্য হন প্রীতিলতা। শর্ত ছিল প্রযোজন হলে দেশের মুক্তির সংগ্রামে নিজের সর্বস্ব এবং জীবন পর্যন্ত ত্যাগ করতে প্রস্তত ্।
তিনি চট্টগ্রাম নন্দনকানন অপর্ণা চরণ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকতা করতেন। সেই সময়ে মাষ্টারদার সাথে বৈঠকে গিয়েছিলেন ধলঘাট সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে। সেইখানে গোপন বৈঠক চলাকালে সাতিত্রী দেবীর মেয়ে দোকানে তাদের জন্য ডিম কিনতে গিয়ে এলাকার এক ব্রিটিশদের গুপ্তচরের সন্দেহ হয়। ফলে তিনি ক্যাম্প এলাকায় ব্রিটিশদেরে ঘাঁটিতে খবরটি ফাঁস করে দেয়। পরে রাত্রে ব্রিটিশ সৈন্যরা এসে তাদের উপর আক্রমণ শরু করলে তাদের সাথে বিপ্লবীদদের সাথে যুদ্ধ সংঘটিত হলে সেই খানে ব্রিটিশ ক্যাপ্টন ক্যামরুণ মারা যায়।
১৯৩২সালের ১৮ সেপ্টেম্বর কাট্রলী ঘাঁটি থেকে মাষ্টারদার আহবান এল প্রীতিলতার কাছে। ছুটে গিয়ে মাষ্টারদার মুখোমুখি দাঁড়ালেন । মাষ্টারদা তাকে বিপ্লবী বাণী শুনালেন। বললেন,২৪ সেপ্টেম্বর রাতে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করা হবে। তার নেতৃত্ব থাববে তুমি,চট্টগ্রামের রানী অগ্নিকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। এই নির্দেশ ঘোষণা করে মাষ্টারদা স্থানান্তর চলে গেলেন। সেই ক্লাবের বাইরে লেখা থাকত ”কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ”। প্রীতিলতার নেতৃত্বে সেইদিন ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করেন বিপ্লবীরা। এই অভিযানের শত্রুর গুলিতে আহত হন- প্রীতিলতা। পরে শত্রুর হাতে ধরা পড়ার আগেই তাঁর হাতে থাকা পটাসিয়াম সায়েনাইট জাতীয় বিষ পান করে তিনি আতœহুতি দেন।
বর্তমানে চট্টগ্রামের পটিয়ার ধলঘাট দক্ষিণ সমুরা গ্রামের প্রীতিলতার ভিটেবাড়ি তাদের বংশধরদের মধ্যে কেউ থাকে না। সেই বাড়িটি সরকারি ভাবে ইজরা নিয়ে বাস করেন শোভারানি দাশের পরিবার। তবে যে ভিটেবাড়িটিতে তিনি থাকতেন সেই অংশটি রয়েছে পরিত্যক্তভাবে। বসতভিটের পশ্চিমে ১৯৭০ সালে বিপ্লবী পূর্ণেন্দু দস্তিদার প্রীতিলতা- অধেন্দু দস্তিদার স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ প্রতিষ্টা করেন।
বিপ্লবীরা এভাবে ব্রিটিশ ও পাকিস্থানী শোষকদের তাড়িয়েছেন দেশ থেকে। বুকের তাজা রক্তে ছিনিয়ে এনেছেন লাল সবুজ পতাকা। আমরা তাদের শ্রদ্ধা জানাই।
=======================================================================
আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের আমর গবেষক মুন্সি আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ। তিনি বাঙালীর ঐতিহ্য সন্ধানের অন্যতম গবেষক। যারা গবেষনা মনষ্ক প্রাচীন সাহিত্যের তথ্য- তালাশ ও ঐতিহ্য আবিষ্কারে তৎপর তাদের কাছে আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ প্রাচীন পুঁথি সংগ্রহ ও সাহিত্যের ঐতিহ্য অন্বেষণের ঐকান্তিকতা ও অবদান প্রতিষ্টান তুল্য এক বিরল ব্যক্তিত্ব। অথচ উচ্চ শিক্ষা বলতে যা বোঝায় ; আবদূল করিম সাহিত্য বিশারদের তা ছিল না। ঐশ্চর্যের মধ্যে ও তিনি লালিত পালিত হননি জীবন কাল অতিবাহিত হয়েছে দুঃখ, দুর্দশা,অভাব অনটন ও ঈষার শিকার হয়ে। ভাবলে অবাক লাগে, পুঁথি সংগ্রহ ও সম্পাদনায- যে খানে প্রযোজন অর্থ সামর্থ ও পান্ডিত কিন্তু প্রাচীন পুঁথি সংগ্রহ ও সাহিত্য ঐতিহ্য অন্বেষণে তিনি আবিষ্কৃত হন সাধনার অত্যুজ্জল দৃষ্টান্ত ও প্রজ্ঞার প্রাণময় প্রদীপ হিসেবে।
উপমহাদেশের বরণ্যে পুঁথি গবেষক এ মহান সাধকের জস্ম ও কর্মে গবিত ঐতিহ্যবাহী পটিয়া বাসী। ১৮৭১ সালে ১১ অক্টোবর চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার সুচক্রদন্ডী গ্রামে জম্ন গ্রহন করেন তিনি। তাঁর পিতা মুন্সি নুরুদ্দীন ছিলেন মোহাম্মদ নবী চৌধুরীর সন্তান। মাতৃজঠরে থাকতেই আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ পিতৃহীন হন। ফলে তাঁর চাচা আছিররুদ্দীনের স্নেহে লালন –পালনে তিনি বড় হন। স্থানীয় সূচক্রদন্ডী বঙ্গ বিদ্যালয় হতে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ কনের। ১৮৯৩ সালে তিনি স্থানীয় পটিয়া ইংরেজী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রাস পাশ করেন এবং উচ্চ শিক্ষার ঐকান্তিক আগ্রহে তিনি চট্টগ্রাম কলেজে উচ্চ শিক্ষার্থে ভর্তি হন। এফ.এ (বর্তমান এইচ.এস.সি) পরীক্ষা দেযার আগেই শারীরিক অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে তাঁকে পড়া লেখা ছেড়ে দিতে হয়। তবে সংস্কৃতি ভার্ষায় তিনি পান্ডিত অর্জন করতে সক্ষম হন।
সাহিত্য বিশারদের কর্মজীবনের সূচনা শিক্ষকতা দিয়ে। তিনি চট্টগ্রাম মিউনিসিপাল হাই স্কুল এবং পরে সীতাকুন্ড হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। বোধহয় সরকারি চাকরির মোহেই তিনি শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে চট্টগ্রাম জজ কোর্টে কেরানির পদে চাকুরির পদ গ্রহণ করেন। তখন কমিশনারের প্রাইভেট সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করেছিলেন কবি নবীন সেন। কবি নবীন সেন আবদুল করিমের লোকসাহিত্য প্রীতি ও তাঁর সাহিত্য প্রতিভার খবর জানতেন। সেই কারণে তিনি আবদুল করিমকে স্নেহ করতেন। আবদুল করিম স্থানীয় ‘জ্যোাতি’ পত্রিকায় এক বিঞ্জপ্তি ছাপালেন যে “যারা আমাদের হাতের লেখা পুঁথি সংগ্রহ করে দেবেন,তাঁদের বিনামূল্যে একবছর ‘জ্যোতি’ পত্রিকা দেওয়া হবে।” এরপর তিনি আনোয়ারা এম.ই. স্কুলে শিক্ষকতায় যোগ দিলেন। কিন্তুু পুঁথিসাহিত্যের প্রতি তাঁর অনুরাগ যা তার পিতামহ থেকে তাঁর ভিতর সঞ্চারিত হয় তা প্রবল হয়েই রইল। স্কুলের শিক্ষকতার সঙ্গে সঙ্গে তিনি হস্ত লিখিত পুঁথি সংগ্রহের কাছ চালিয়ে যান। এরপরে তিনি ১৯০৬ সালে চট্টগ্রামের স্কুল সমূহের বিভাগীয় ইন্সপেক্টরের অফিে
তাঁর বিশ্বাস ছিল প্রাচীন পুঁথিগুলো সংগৃহীত ও উপযুক্তভাবে সংরক্ষিত না হলে প্রাচীন সাহিত্যেও বিপুল ভান্ডার লোক চক্ষুর অগোচরে থেকে যাবে, হারিয়ে যাবে ঐতিহ্যের মূল্যবান উপকরণ।তাই শারীরিক-সাংসারিক কষ্ঠ স্বীকার,বহু লাঞ্জনা ও অপমানকে সহ্য করে পুঁথি সংগ্রহ করেছেন। তিনি কখনো লোক মারফত অর্থের বিনিময়ে, কখনো নিজে গ্রামে-গঞ্ছে গিয়ে ।
ছোটকালে তাঁর বাড়িতে অনেকবার পুঁথির আসর বসেছেন। পুঁথি পাঠের আসরে বসে আলাওলের পদ্মবতী পাঠ শুনতেন। তিনি পুঁথি সংগ্রহের কাজে লিপ্ত হয়ে প্রথম যে পান্ডুলিপি সন্ধান পান, সৌভাগ্য ক্রমে সেই পুঁথিই ছিল আলাওলের “পদ্মাবতী”। এই পুঁথির আবিষ্কার তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়, নতুন নতুন আবিষ্কারের নেশা তাঁকে পেয়ে বসে, সাহিত্যের গবেষণায় তিনি সম্পূর্ণ ভাবে নিজেকে লিপ্ত করেন। ফলে বাংলা সাহিত্যেও ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করেন স্বয়ং তিনি। আনোয়ারা স্কুলে শিক্ষকতা করার সময় এক চাষীর ঘরে তিনি পদ্মবতীর এই পুঁথিটি পান।
তার সংগৃহীত পুঁথি সংখ্যা আড়াই হাজারেরও অধিক বলে জানা যায়। এর মধ্যে মুসলিম কবি রচিত পুঁথির সংখ্যা বারোশ’র উপরে বলে অনুমান করা হয়। পুঁথি সংগ্রহ করেই তিনি সন্তুষ্ঠ ছিলেন না। পুঁথি তিনি সম্পদানা করেছেন, পুঁিথর পরিচিতি লিখেছেন এবং এই বিষয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় গবেষণা ধর্মী প্রবদ্ধ লিখেছেন। তিনি প্রায় ছয়শত মৌলিক গবেষণামূলক প্রবদ্ধ পত্র পত্রিকায় প্রকাশ করেন বলে জানা যায়-যার প্রধান বিষয় ছিল মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য। সে সময়কার প্রধান প্রধান সব পত্রিকায় তার প্রবদ্ধ প্রকাশিত হতো। সাধনা কহিনুর, নবনূর, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা এডুকেশন গেজেটের মতো উন্নত শ্রেণীর পত্রিকায় তার রচনা ছাপা হতো। একাধিক পত্রিকার তিনি সম্পাদক ছিলেন। তাঁর সম্পাদিত পত্রিকার গুলোর মধ্যে ‘নবনূর’ , ‘সওগাত’ ও পূজারীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁর বিপুল সংগ্রহ প্রায় ছ’শ পুঁথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করেন। আরো সাড়ে চারশ পুঁথি তার উত্তারিধকারী হিসেবে অধ্যাপক আহমদ শরীফ দান করেন বরেন্দ্র মিউজিয়ামে।
শুধু সংখ্যা আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদের সংগ্রহের তাৎপর্য উপলদ্ধি করা যাবে না। এই সংগ্রহের ফলেই মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের বহু অপরিজ্ঞাত কবি, অজ্ঞাতপূর্ব কাব্য ও অপরিচিত তথ্যের সঙ্গে আমাদের পরিচয় সাধিত হয়েছে। শাহ্ মুহাম্মদ সগীর, জয়নুদ্দীন, সৈয়দ সুলতান, দৌলত উজীর, বাহারাম খান, মুহাম্মদ কবীর, শাবিরিদ খান, শেখ চাঁদ, মুহাম্মদ খান, আলী রাজা প্রভৃতি কবির কথা তাঁর মাধ্যমে জানা গেছে। শ্রীধরের ‘বিদ্যা সুন্দর’ কিংবা ভবানী ‘গোপীচন্দের পাচালী’ তাঁরই সংগৃহীত।
আজীবন সাহিত্য সাধানার স্বীকৃতি স্বরূপ চট্টগ্রামের পন্ডিত সমাজ ‘সাহিত্য’ সাগর এবং ‘নদীয়ার পন্ডিত সমাজ’ তাঁকে সাহিত্য সাগর উপাধি দেন। সাহিত্য বিশারদ প্রথম সংগ্রহক ও যিনি অসম্পদায়িক দৃষ্টি ভঙ্গি নিয়ে হিন্দু মুসলিম উভয় সম্পদায়ের কবিদের রচিত পুঁথি সংগ্রহ করেছেন। তদানীন্তন বিট্রিশ শাসিত পৃর্ববাংলায় সাহিত্যবিশারদ একমাত্র সাহিত্য ব্যাক্তিত্ব যিনি মধ্যযুগের রচিত বাংলা সাহিত্যের পুঁথি সংগ্রহে তিনি আতœনিয়োগ করেন। তাঁর অবতদানের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক আহম্দ শরীফ বলেন, তাঁর সংগৃহীত পুঁথিই আজ সাহিত্য ও সাংস্কৃতির ক্ষেত্রে মুসলমানদের মুখ রক্ষা করেছে। দীর্ঘদিন তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এ মহান সাধক ১৯৫৩ সালের ৩০সেপ্টেম্বর পরলোক গমন করেন।
উপমহাদেশের বরণ্যে পুঁথি গবেষক এ মহান সাধকের জস্ম ও কর্মে গবিত ঐতিহ্যবাহী পটিয়া বাসী। ১৮৭১ সালে ১১ অক্টোবর চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার সুচক্রদন্ডী গ্রামে জম্ন গ্রহন করেন তিনি। তাঁর পিতা মুন্সি নুরুদ্দীন ছিলেন মোহাম্মদ নবী চৌধুরীর সন্তান। মাতৃজঠরে থাকতেই আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ পিতৃহীন হন। ফলে তাঁর চাচা আছিররুদ্দীনের স্নেহে লালন –পালনে তিনি বড় হন। স্থানীয় সূচক্রদন্ডী বঙ্গ বিদ্যালয় হতে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ কনের। ১৮৯৩ সালে তিনি স্থানীয় পটিয়া ইংরেজী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রাস পাশ করেন এবং উচ্চ শিক্ষার ঐকান্তিক আগ্রহে তিনি চট্টগ্রাম কলেজে উচ্চ শিক্ষার্থে ভর্তি হন। এফ.এ (বর্তমান এইচ.এস.সি) পরীক্ষা দেযার আগেই শারীরিক অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে তাঁকে পড়া লেখা ছেড়ে দিতে হয়। তবে সংস্কৃতি ভার্ষায় তিনি পান্ডিত অর্জন করতে সক্ষম হন।
সাহিত্য বিশারদের কর্মজীবনের সূচনা শিক্ষকতা দিয়ে। তিনি চট্টগ্রাম মিউনিসিপাল হাই স্কুল এবং পরে সীতাকুন্ড হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। বোধহয় সরকারি চাকরির মোহেই তিনি শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে চট্টগ্রাম জজ কোর্টে কেরানির পদে চাকুরির পদ গ্রহণ করেন। তখন কমিশনারের প্রাইভেট সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করেছিলেন কবি নবীন সেন। কবি নবীন সেন আবদুল করিমের লোকসাহিত্য প্রীতি ও তাঁর সাহিত্য প্রতিভার খবর জানতেন। সেই কারণে তিনি আবদুল করিমকে স্নেহ করতেন। আবদুল করিম স্থানীয় ‘জ্যোাতি’ পত্রিকায় এক বিঞ্জপ্তি ছাপালেন যে “যারা আমাদের হাতের লেখা পুঁথি সংগ্রহ করে দেবেন,তাঁদের বিনামূল্যে একবছর ‘জ্যোতি’ পত্রিকা দেওয়া হবে।” এরপর তিনি আনোয়ারা এম.ই. স্কুলে শিক্ষকতায় যোগ দিলেন। কিন্তুু পুঁথিসাহিত্যের প্রতি তাঁর অনুরাগ যা তার পিতামহ থেকে তাঁর ভিতর সঞ্চারিত হয় তা প্রবল হয়েই রইল। স্কুলের শিক্ষকতার সঙ্গে সঙ্গে তিনি হস্ত লিখিত পুঁথি সংগ্রহের কাছ চালিয়ে যান। এরপরে তিনি ১৯০৬ সালে চট্টগ্রামের স্কুল সমূহের বিভাগীয় ইন্সপেক্টরের অফিে
তাঁর বিশ্বাস ছিল প্রাচীন পুঁথিগুলো সংগৃহীত ও উপযুক্তভাবে সংরক্ষিত না হলে প্রাচীন সাহিত্যেও বিপুল ভান্ডার লোক চক্ষুর অগোচরে থেকে যাবে, হারিয়ে যাবে ঐতিহ্যের মূল্যবান উপকরণ।তাই শারীরিক-সাংসারিক কষ্ঠ স্বীকার,বহু লাঞ্জনা ও অপমানকে সহ্য করে পুঁথি সংগ্রহ করেছেন। তিনি কখনো লোক মারফত অর্থের বিনিময়ে, কখনো নিজে গ্রামে-গঞ্ছে গিয়ে ।
ছোটকালে তাঁর বাড়িতে অনেকবার পুঁথির আসর বসেছেন। পুঁথি পাঠের আসরে বসে আলাওলের পদ্মবতী পাঠ শুনতেন। তিনি পুঁথি সংগ্রহের কাজে লিপ্ত হয়ে প্রথম যে পান্ডুলিপি সন্ধান পান, সৌভাগ্য ক্রমে সেই পুঁথিই ছিল আলাওলের “পদ্মাবতী”। এই পুঁথির আবিষ্কার তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়, নতুন নতুন আবিষ্কারের নেশা তাঁকে পেয়ে বসে, সাহিত্যের গবেষণায় তিনি সম্পূর্ণ ভাবে নিজেকে লিপ্ত করেন। ফলে বাংলা সাহিত্যেও ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করেন স্বয়ং তিনি। আনোয়ারা স্কুলে শিক্ষকতা করার সময় এক চাষীর ঘরে তিনি পদ্মবতীর এই পুঁথিটি পান।
তার সংগৃহীত পুঁথি সংখ্যা আড়াই হাজারেরও অধিক বলে জানা যায়। এর মধ্যে মুসলিম কবি রচিত পুঁথির সংখ্যা বারোশ’র উপরে বলে অনুমান করা হয়। পুঁথি সংগ্রহ করেই তিনি সন্তুষ্ঠ ছিলেন না। পুঁথি তিনি সম্পদানা করেছেন, পুঁিথর পরিচিতি লিখেছেন এবং এই বিষয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় গবেষণা ধর্মী প্রবদ্ধ লিখেছেন। তিনি প্রায় ছয়শত মৌলিক গবেষণামূলক প্রবদ্ধ পত্র পত্রিকায় প্রকাশ করেন বলে জানা যায়-যার প্রধান বিষয় ছিল মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য। সে সময়কার প্রধান প্রধান সব পত্রিকায় তার প্রবদ্ধ প্রকাশিত হতো। সাধনা কহিনুর, নবনূর, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা এডুকেশন গেজেটের মতো উন্নত শ্রেণীর পত্রিকায় তার রচনা ছাপা হতো। একাধিক পত্রিকার তিনি সম্পাদক ছিলেন। তাঁর সম্পাদিত পত্রিকার গুলোর মধ্যে ‘নবনূর’ , ‘সওগাত’ ও পূজারীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁর বিপুল সংগ্রহ প্রায় ছ’শ পুঁথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করেন। আরো সাড়ে চারশ পুঁথি তার উত্তারিধকারী হিসেবে অধ্যাপক আহমদ শরীফ দান করেন বরেন্দ্র মিউজিয়ামে।
শুধু সংখ্যা আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদের সংগ্রহের তাৎপর্য উপলদ্ধি করা যাবে না। এই সংগ্রহের ফলেই মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের বহু অপরিজ্ঞাত কবি, অজ্ঞাতপূর্ব কাব্য ও অপরিচিত তথ্যের সঙ্গে আমাদের পরিচয় সাধিত হয়েছে। শাহ্ মুহাম্মদ সগীর, জয়নুদ্দীন, সৈয়দ সুলতান, দৌলত উজীর, বাহারাম খান, মুহাম্মদ কবীর, শাবিরিদ খান, শেখ চাঁদ, মুহাম্মদ খান, আলী রাজা প্রভৃতি কবির কথা তাঁর মাধ্যমে জানা গেছে। শ্রীধরের ‘বিদ্যা সুন্দর’ কিংবা ভবানী ‘গোপীচন্দের পাচালী’ তাঁরই সংগৃহীত।
আজীবন সাহিত্য সাধানার স্বীকৃতি স্বরূপ চট্টগ্রামের পন্ডিত সমাজ ‘সাহিত্য’ সাগর এবং ‘নদীয়ার পন্ডিত সমাজ’ তাঁকে সাহিত্য সাগর উপাধি দেন। সাহিত্য বিশারদ প্রথম সংগ্রহক ও যিনি অসম্পদায়িক দৃষ্টি ভঙ্গি নিয়ে হিন্দু মুসলিম উভয় সম্পদায়ের কবিদের রচিত পুঁথি সংগ্রহ করেছেন। তদানীন্তন বিট্রিশ শাসিত পৃর্ববাংলায় সাহিত্যবিশারদ একমাত্র সাহিত্য ব্যাক্তিত্ব যিনি মধ্যযুগের রচিত বাংলা সাহিত্যের পুঁথি সংগ্রহে তিনি আতœনিয়োগ করেন। তাঁর অবতদানের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক আহম্দ শরীফ বলেন, তাঁর সংগৃহীত পুঁথিই আজ সাহিত্য ও সাংস্কৃতির ক্ষেত্রে মুসলমানদের মুখ রক্ষা করেছে। দীর্ঘদিন তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এ মহান সাধক ১৯৫৩ সালের ৩০সেপ্টেম্বর পরলোক গমন করেন।