পটিয়া বিসিক শিল্পনগরী ৩
যুগ পরও পূর্ণাঙ্গ
রূপ পায়নি
চট্টগ্রামের পটিয়ায় বিসিক শিল্পনগরীর ৩ যুগ পরেও পূর্ণাঙ্গ রূপ
পায়নি। পটিয়ার দক্ষিণাংশে শ্রীমতি খালের তীরে ৩ দশক পূর্বে প্রতিষ্ঠিত
হয় পটিয়া বিসিক শিল্পনগরী। এটি উপজেলা পর্যায়ে
একটি মডেল হলেও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাবে বিশেষ করে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটে পড়ে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিপুল সম্ভাবনা থাকা
সত্বেও অবহেলা ও কার্যকর উদ্যোগের অভাবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জানা যায়, ১৯৮০-১৯৯০ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে তৎকালীন পটিয়ার শ্রীমতি খালের পার্শ্বে ১০.৫৪ একর জমির ওপর এ বিসিক
শিল্পনগরীর প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মধ্যেও মোট বরাদ্দযোগ্য
৮.৪৮ একর জমির মধ্যে ৭৭টি প্লট তৈরি করা হয়। এতে মোট ২২ শিল্প ইউনিট
গড়ে তোলেন শিল্প উদ্যোক্তারা। সবকটি প্লটে বিগত ৩০
বছরে ২৩ ইন্ডাস্ট্রি চালু হয়েছে। বর্তমানে ৩য় কর্নফুলী
সেতু চালু হওয়ায় এবং পটিয়া চট্টগ্রাম মহানগরীর নিকটবর্তী উপজেলা হিসেবে এখানে আরো নতুন
নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে একের পর এক শিল্প উদ্যোক্তারা বিসিক অফিসে ধর্ণা দিচ্ছে। পটিয়া বিসিক প্লট চাহিদার কথা জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে ২ বছর পূর্বে প্রস্তাব
পাঠালে তা একবার তদন্ত করে ইন্দ্রপোল শিল্পাঞ্চলে বিসিকের (প্রস্তাবিত) নতুন জোনে প্লট
করার আশ্বাস দিলেও অদৃশ্য কারণে বর্তমানে ফাইলটি লাল ফিতায় বন্দী হয়ে আছে। এছাড়াও বিসিকের পার্শ্ববর্তী রেললাইনের সঙ্গে লাগোয়া জমিতেও বিসিক সম্প্রসারণের
উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু যথাযথ কর্তৃপক্ষের
উদাসীনতায় পটিয়া বিসিকের সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া মুখথুবড়ে পড়েছে। ফলে আগ্রহী শিল্প উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের আশা নিয়েও হতাশায় ভুগছে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে শিল্প মালিকরা উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করলেও বর্তমানে এ শিল্প এলাকায় ২০টি ইন্ডাস্ট্রি
উৎপাদনে রয়েছে। ২টি রুগ্ণ শিল্প হিসেবে রূপলাভ করলেও ইতোমধ্যে ব্যাংকঋণ পুনঃমঞ্জুর করাতে সক্ষম
হওয়ায় তাও শিগগিরই উৎপাদনে যাচ্ছে বলে বিসিক
সূত্র জানায়। সর্বশেষ এশিয়া প্লান্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি
দীর্ঘদিন তাদের পটটি অর্ধেক ভবন নির্মাণ করে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখলেও বর্তমানে
ইন্ডাস্ট্রিটি চালুর উদ্যোগ নিয়েছে।
শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকরা
জানান, বৃষ্টিপাত হলে জলাবদ্ধতার কারণে হাটু পরিমাণ
পানি বিসিক এলাকায় জমে থাকে। আবার প্রচ- বিদ্যুৎ সংকটে অনেক ইন্ডাস্ট্রি পণ্য উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অর্জন করতে পারছে না। ফলে ইন্ডাস্ট্রিগুলো ব্যাংকঋণ পরিশোধ করতে না পারায় এখন লালবাতি জ্বলার উপক্রম
হয়েছে। শিল্পনগরীর কর্মকর্তা সমীরন বড়–য়া জানান, যোগযোগ ব্যবস্থাসহ শিল্পায়নের জন্য সুন্দর
পরিবেশ বিদ্যমান থাকলেও পর্যাপ্ত শিল্প প্লট না থাকায় আমাদের পক্ষে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান
গড়ায় সহায়তা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে ইন্দ্রপোল শিল্পাঞ্চলে
বিসিকের মালিকানাধীন যে ৪ একর জায়গা রয়েছে সেখানে পট তৈরি করে নতুন শিল্প স্থাপনের
লক্ষ্যে বিসিক ইতোমধ্যে প্রাথমিক জরিপ কাজ সম্পন্ন করেছে। এ ব্যাপারে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে নথিপত্র প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, এ শিল্প ইউনিট বাস্তবায়িত হলে এখানে ১৮-২০টি
নতুন ইন্ডাস্ট্রি স্থাপন করা যাবে। এছাড়াও বর্তমানে বিসিকের
পূর্ব পার্শ্বে যে বৃহত্তর খোলা জমি রয়েছে তা অধিগ্রহণ করেও শিল্প ইউনিট গড়ে তোলা সম্ভব। পটিয়ার সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী বলেন, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের
উদ্যোগ নেয়া হবে। শিল্প উদ্যোক্তা পটিয়া পৌরসভার মেয়র অধ্যাপক
হারুনুর রশিদ জানান, পটিয়ার বর্তমানে যে হারে শিল্পপ্রতিষ্ঠান
হয়েছে এতে সরকার যেমন রাজস্ব পাচ্ছে তেমনি অনেক অসহায় মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে
সংশ্লিটরা যদি আরো উদ্যোগী হয় তাহলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্র এ পটিয়া বৃহৎ শিল্পনগরীতে পরিণত হবে নিঃসন্দেহে।
No comments:
Post a Comment